নোটিশ

শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১২

মুসলিম নির্যাতন (৪)- ইরাকে মুসলিম গণহত্যা ও নির্যাতনের নির্মম ইতিহাস


ইরাক পরিচিতিঃ


ইরাক মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র। ইরাকের দক্ষিণে কুয়েত এবং সৌদি আরব, পশ্চিমে জর্ডান, উত্তর-পশ্চিমে সিরিয়া, উত্তরে তুরস্ক এবং পূর্বে ইরান অবস্থিত। ইরাক মূলত মরুময় দেশ, কিন্তু দজলা ও ফোরাতের মধ্যবর্তী অববাহিকার ভূমি উর্বর। ইরাকের জলবায়ু মূলত ঊষর।
শীতকাল শুষ্ক ও ঠাণ্ডা; গ্রীষ্মকাল শুষ্ক, গরম, ও মেঘহীন। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে ভারী বরফ পড়ে এবং এতে মাঝে মাঝে বন্যার সৃষ্টি হয়। আরবি ইরাকের সরকারী ভাষা। ইরাকের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি জনগণের মাতৃভাষা আরবি। ইরাকে প্রচলিত আরবি ভাষার লিখিত রূপটি ধ্রুপদী বা চিরায়ত আরবি ভাষার একটি পরিবর্তিত রূপ। কিন্তু কথা বলার সময় ইরাকের লোকেরা আরবির বিভিন্ন কথ্য উপভাষা ব্যবহার করেন। ইরাকের জনসংখ্যা বর্তমানে ৩,০৩,৯৯,৫৭২ জন।

ইরাকে ইসলামঃ

ইসলাম আবির্ভাবের সূচনাকাল থেকেই ইরাকের পূণ্যভূমি ইসলামের সুশীতল ছায়ার অধীনে এসেছিল। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহু আলী আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিলাফতকালে রাজধানী কূফাতে স্থানান্তরিত করেন। উমাইয়া খিলাফতের সময় ৭ম শতাব্দীতে দামাস্কাস থেকে ইরাক রাজ্য পরিচালনা করা হত। আব্বাসীয় খলিফাগণ ৮ম শতাব্দীতে তাদের রাজধানী বাগদাদে প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামী স্বর্ণযুগে বাগদাদ ছিল শিক্ষা-দীক্ষার কেন্দ্রস্থল।

হালাকু খান কর্তৃক মুসলিম গণহত্যা ও বাগদাদ ধ্বং‌সঃ

১২৫৭ সালে হালাকু খান মোঙ্গলিয়ান এক বিশাল বাহিনী বাগদাদ অধিগ্রহণের জন্য আসে। আব্বাসীয় খলিফা আল-মুতাসিম তাকে প্রত্যাখ্যান করলে ১২৫৮ সালের জানুয়ারী মাসে বাগদাদ আক্রমণ করে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ধারণা করা হয়, সে সময় ২,০০,০০০ মুসলমান বা তারও বেশি শাহাদতবরণ করেন। মোঙ্গলীয়ানরা বাগদাদের বিশাল লাইব্রেরি ধ্বংস করে ফেলে। সেই লাইব্রেরিকে বাইত আল-হিকমাবা জ্ঞানের ঘরবলা হত যেখানে বহু মূল্যবান ও ঐতিহাসিক দলীল, বইপত্র পাওয়া যেত।

তিমুর লেংক (তৈমুর লং) কর্তৃক মুসলিম গণহত্যা ও বাগদাদ ধ্বং‌সঃ

পরবর্তীতে ১৪০১ সালে মোঙ্গলীয়ান তৈমুর লং ইরাক আক্রমণ করে। সে সময় ২০,০০০ নিরীহ মুসলমানকে শহীদ করা হয়েছিল। তৈমুর তার সৈন্যদের এভাবে আদেশ করেছিল যেন, প্রত্যেক সৈন্য তার সম্মুখে এসে দুইজন করে মুসলমানের খন্ডিত মাথা দেখায় (নাউযুবিল্লাহ)। আর এজন্য অনেক বন্দী মুসলমানদের অকাতরে শহীদ হতে হয়েছিল।

অটোম্যান সাম্রাজ্যঃ

১৪শ শতাব্দীর শেষের দিকে মুসলমানেরা ইরাকে আবারো অটোম্যান সাম্রাজ্য গঠন করেন। মধ্যবর্তী কিছু বিরতি ব্যতীত ইরাকে অটোম্যান সাম্রাজ্য ১৫৩৩ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

১ম বিশ্বযুদ্ধঃ

জার্মানি ও সেন্ট্রাল পাওয়ার ১ম যুদ্ধের সময় অটোম্যান সাম্রাজ্য ধ্বংস করে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী ১৯১৫-১৬ সালে ইরাক আক্রমণ করলেও তুর্কি বাহিনীর সাথে তারা পেরে ওঠে নি। কিন্তু শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে আবশেষে ১৯১৭ সালে তারা বাগদাদ জয় করে। ব্রিটিশরা ১৯২০ সালের ১১ নভেম্বর লীগ অব ন্যাশনস এর অধীনে ইরাক রাজ্য গঠন করে।

ইরাকের স্বাধীনতাঃ

১৯৩২ সালে কিং ফয়সালের সুপারিশে ব্রিটিশরা ইরাকের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর বিভিন্ন পালাবদলে বিভিন্ন জন ইরাকের শাসনভার গ্রহণ করে। পরিশেষে ১৯৭৯ সালে সাদ্দাম হুসাইন ইরাকের প্রেসিডেন্ট হয়।

ইরান-ইরাক যুদ্ধঃ

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সূচনা ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সীমান্ত বিরোধ এবং ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়া জংগীদের ইরানি মদদ দেয়ার অভিযোগে ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বাহিনী পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অবৈধভাবে ইরানি ভূ-খন্ড আক্রমণ এবং অনুপ্রবেশ চালায়। সদ্য ঘটে যাওয়া ইরানি ইসলামি বিপ্লবের নাজুক অবস্থাকে ব্যবহার করে ইরাক যুদ্ধে দ্রুত অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা চালায় । কিন্তু কার্যত সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় । ১৯৮২ সালের জুনের মধ্যে ইরান তার হারানো সমস্ত ভূ-খন্ড পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয় । এর পরের ৬ বছর ইরানি বাহিনী যুদ্ধে অগ্রসর ভূমিকায় ছিল। জাতিসংঘের বারবার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয় । ২০০৩ সালে দু'দেশের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধবন্দীর বিনিময় ঘটে। অবশেষে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ১৯৮৮ সালের আগস্টে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে এর অবসান ঘটে।

পার্সিয়ান গালফ যুদ্ধ (উপসাগরীয় যুদ্ধ)

১৯৯০ সালে ইরাক দাবী করে যে, তার পার্শ্ববর্তী দেশ কুয়েত তেল উত্তোলন বাড়িয়ে দিয়েছে যা ইরাকের তেল রাজস্ব আয় কমে দিয়েছে। কিন্তু কুয়েত সে দাবী প্রত্যাখ্যান করে। এমতাবস্থায়, ১৯৯০ সালের আগস্টে ইরাক কুয়েতকে আক্রমণ করে। ফলে ভয়াবহ এক যুদ্ধ বেঁধে যায়। ধারণা করা হয়, এ যুদ্ধে ইরাকি সৈন্যবাহিনীর প্রায় ৮০০০ থেকে ১,০০,০০০ জন মৃত্যুবরণ করে। জাতিসংঘের এর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং ইরাককে সংখ্যালঘুদের উপর আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধের জন্য চাপ দেয়। এ যুদ্ধের পর ইরাকের বিমান বাহিনী মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়।

ইন্তিফাদা আন্দোলনঃ

১৯৯১ সালে যুদ্ধ শেষের দিকে শিয়া ও ইরাকি কুরদিশরা সাদ্দামের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে যা ইন্তিফাদা আন্দোলন নামে পরিচিত। সাদ্দাম আগ্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে এ আন্দোলনকে দমন করে। এ সময় ১,০০,০০০ মানুষ মারা যায়। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও তুর্কি ইরাককে নো ফ্লাই জোনচিহ্নিত করে এ নির্যাতন বন্ধের জন্য।

জাতিসংঘের হস্তক্ষেপঃ

১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ শেষ হবার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রিজলিউশন ৬৮৭ সংশোধনের মাধ্যমে আদেশ জারি করে যে, ইরাকের সকল ধরণের রাসায়নিক, জৈব, নিউক্লীয় এবং দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রোগ্রাম অবিলম্বে বন্ধ করে দিতে হবে। জাতিসংঘ বিশেষ কমিশন কন্ট্রোলের (ইউএনএসকম) মাধ্যমে এই আদেশ প্রচার করা হয়। জাতিসংঘ পরিদর্শকদের উপস্থিতিতে ইরাক বিপুল পরিমাণ গণবিধ্বংসী অস্ত্র ধ্বংস করে, তার পরও কিছু বস্তুনিষ্ঠ ইস্যুর সমাধান হয়নি। ১৯৯৮ সালে পরিদর্শক দল ইরাক ত্যাগ করে, কারণ কমিশন কন্ট্রোলের প্রধান রিচার্ড বাটলার বুঝতে পারছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক মহড়া আসন্ন। পরিদর্শকেরা চলে আসার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ৪ দিনব্যাপী বোমা বিস্ফোরণের মহড়া চালায়।
জাতিসংঘ প্রস্তাবিত UN Security Council Resolutions (UNSCR 687) এর প্রতি ইরাকি সরকার সম্মতি জানায়। সে সময় ইরাকি সরকার জাতিসংঘের পরিদর্শক দলের সাথে মাঝে মাঝে কাজ করছিল। কিন্ত ১৯৯৮ সালে ইরাকি সরকার দাবী করে যে, United Nations Special Commission এর অস্ত্র পরিদর্শক দলের সাথে আমেরিকান CIA (Central Intelligence Agency) এর গুপ্তচর ছিল।
জাতিসংঘ পরিদর্শনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য (১৯৯৮ পর্যন্ত ফ্রান্স) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের নো-ফ্লাই জোনে ইরাকের সাথে ছোটখাটো যুদ্ধে লিপ্ত হয়। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের শিয়া অঞ্চলের কুর্দিস্তান রক্ষার জন্য এই নো-ফ্লাই জোন তৈরি করা হয়েছিল। ইরাক সরকার এটাকে ইরাকের সার্বভৌমত্বের লংঘন বলে মনে করতো। সেখানে ইরাক আকাশ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে মার্কিন ও ব্রিটিশ আকাশ পেট্রোলের নিয়মিত ছোট আকারের গোলাবারুদ বিনিময় চলতো।
UNSCR 706 ও UNSCR 712 অনুযায়ী জাতিসংঘ তেলের বিনিময়ে খাদ্য প্রদানের ষড়যন্ত্রমূলক চুক্তি করার জন্য ইরাকের উপর চাপ দিতে থাকে। সাদ্দাম এ চুক্তি অগ্রাহ্য করলে আমেরিকার স্থল-বাহিনী ও বোমা নিক্ষেপক অস্ত্র ইরাক সীমান্তে নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ইরাক লিবারেশন অ্যাক্টএ স্বাক্ষর করে এবং অপারেশন ডেজার্ট ফক্সএর সূচনা করে।
২০০১ সালের এপ্রিলে বুশের কেবিনেট ইরাকে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সম্মত হয়, কারণ ইরাক মধ্যপ্রাচ্য থেকে আন্তর্জাতিক তেল বাজারে একটা অস্থিতিশীল প্রভাব বিস্তার করেছিল। ১১ই সেপ্টেম্বর হামলার অনেক আগেই নিওকনজারভেটিভেরা ইরাকের তেল ক্ষেত্রগুলো আয়ত্বে আনার জন্য একটি ক্যু এর পরিকল্পনা করেছিল। তারা আশা করছিল, "একটি নতুন সরকার ইরাকের তেল ব্যবহার করে ওপেক কোটা থেকে বেশী তেল উৎপাদনের মাধ্যমে ওপেক বাণিজ্য-জোট ভেঙে দিতে সক্ষম হবে।" কিন্তু আগ্রাসনের পরপরই এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়, কারণ শেল অয়েল কোম্পানির তৎকালীন সিইও ফিলিপ ক্যারল (যাকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল) ইরাকী তেল কারখানাগুলো ব্যক্তি মালিকানায় নিয়ে আসার সাথে জড়িত হতে চাচ্ছিলেন না, যেহেতু জড়িত হলে মার্কিন ফার্মগুলো বর্জন করতে হতে পারে। রাজ্য পরিচালিত তেল মন্ত্রনালয়ের অবশ্য এ ভয় ছিল না, তাই তারা ইরাকে তেল আগ্রাসন চালাতে উদ্যত হয়। মার্কিন তেল বাণিজ্য উপদেষ্টা ফালাহ্‌ আলজিবারি দাবী করেছিল, ২০০১ সালে বুশ ক্ষমতা পাওয়ার পরপরই ওয়াশিংটন, মধ্যপ্রাচ্য ও ক্যালিফোর্নিয়াতে ইরাকের বর্তমান সরকার উচ্ছেদ বিষয়ে গোপন মিটিং শুরু করেছিল। আলজিবারি বিবিসি-কে বলেছিল, সে বুশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাদ্দাম হুসাইনের প্রভাবশালী উত্তরসূরীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিল।

অপারেশন সাউদার্ন ফোকাসঃ

অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম এর এক বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্র অপারেশন সাউদার্ন ফোকাস শুরু করেছিল, এর সাড়া দানের কৌশল পরিবর্তনের জন্য। তারা নির্বাচিত লক্ষ্যবস্তু অনেকাংশে বৃদ্ধি এবং ইরাকের নো-ফ্লাই জোনে ঢুকে পড়ার মত কাজকর্মের মাধ্যমে ইরাকের নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে বিঘ্ন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল।
২০০২ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য কর্তৃক দক্ষিণ ইরাকের নো-ফ্লাই জোনে অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি করা হয় এবং ইরাকের আকাশ প্রতিরক্ষা আর্টিলারি ও অন্যান্য জটিল সামরিক স্থাপনা থেকে তাদের প্রতি গোলা বর্ষণ শুরু হয়। এ সময় গোয়েন্দা তৎপরতাও বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০০২ সালে ১০জুলাই আমেরিকান CIA এর বিশেষ গোয়ান্দাবাহিনী প্রবেশ করেছিল যারা ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের জন্য যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কাজ করছিল। জুন ২০০২ থেকে শুরু করে ২০০৩ সালের মার্চে ইরাক আগ্রাসন শুরুর পূর্ব পর্যন্ত এই অপারেশন চলেছিল। সে হিসেবে এটাকে আগ্রাসন পূর্ব "সফ্‌টেনিং আপ" (softening up) বলা যেতে পারে যার মাধ্যমে ইরাকের আকাশ প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল মোসলে ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই অপারেশনের কথা প্রকাশ করে।
ইরাকে নিক্ষেপিত বোমার ভর ২০০২ সালের মার্চে ছিল ০, এপ্রিলে হয়েছে ০.৩, আর মে-আগস্টে গিয়ে তা হয়েছে ৮-১৪ টনের মত। যুদ্ধের আগে সবচেয়ে বেশী বোমাবর্ষণ ঘটেছিল সেপ্টেম্বরে, সপ্তাহ প্রতি ৫৪.৬ টন।

ইরাকে আমেরিকার পিশাচ বাহিনীর আক্রমণঃ

ইরাক যুদ্ধ (মার্কিন অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম ) নামেও পরিচিত; অন্য নাম: (অপারেশন টেলিক, ইরাক দখল) । এ যুদ্ধ ২০০৩ সালের ২০শে মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত বাহিনীর ইরাক আগ্রাসনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এই আগ্রাসী বাহিনীতে অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড এবং অন্যান্য কয়েকটি জাতির সৈন্যদল অংশ নিয়েছিল।
ইরাক আক্রমণ করার জন্য তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ ও কোয়ালিশন বাহিনী যে কারণ দেখিয়েছিল তা হল: ইরাক ১৯৯১ সালের চুক্তি অমান্য করে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ করছে এবং তাদের কাছে এ ধরণের অস্ত্রের মজুদও আছে। তখন সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, ইরাক যুক্তরাষ্ট্র, এর জনগণ এবং মিত্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য বড় ধরণের হুমকি। পরবর্তীতে এএ সমর্থক কর্মকর্তাদের প্রচণ্ড সমালোচনা করা হয়। কারণ আগ্রাসনের পরে পরিদর্শকরা ইরাকে গিয়ে কোন ধরণের গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পায়নি। তারা জানায়, ইরাক ১৯৯১ সালেই গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ ত্যাগ করেছে, ইরাকের উপর থেকে আন্তর্জাতিক অনুমোদন সরিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তাদের নতুন করে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণের কোন পরিকল্পনাও ছিল না। আর এখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা যা কিছু অস্ত্র পাওয়া গেছে আগেরগুলোরই ভগ্নাবশেষ। এগুলোর জন্য মার্কিন বাহিনী ইরাক আক্রমণ করেনি। কোন কোন মার্কিন কর্মকর্তা দাবী করেন যে, সাদ্দাম হোসেন আল-কায়েদাকে সহযোগিতা করছেন, কিন্তু এর পক্ষেও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার পরও আগ্রাসনের কিছু কারণ দেখানো হয়েছে। যেমন: ফিলিস্তিনের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা, ইরাকী সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লংঘন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং ইরাকের তেল সম্পদ অধিগ্রহণ করা। অবশ্য সর্বশেষ কারণটির কথা মার্কিন কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে, অথচ সেটাই তাদের মূল কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

সাদ্দামের পলায়নঃ

আগ্রাসী বাহিনী আক্রমণ করার পরপরই ইরাকী সামরিক বাহিনী পরাজিত হয়। রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন পালিয়ে বেড়ায়, অবশেষে ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে আটক করা হয়। ২০০৬ এর ডিসেম্বরে সাদ্দামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মার্কিন কোয়ালিশন বাহিনী ইরাক দখল করে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু আগ্রাসনের পরপরই কোয়ালিশন বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং ইরাকের বিভিন্ন পন্থী দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে অপ্রতিসম বিভিন্নমুখী আক্রমণের মাধ্যমে ইরাকী অভ্যুত্থানের সূচনা ঘটে। সুন্নি এবং শিয়া দলগুলোর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং আল-কায়েদা ইরাকে তাদের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে। এই যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা আনুমানিক ১৫০,০০০ থেকে ১০ লক্ষের বেশী। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে ৮৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশী, আর যুক্তরাজ্যের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ইউরো। উল্লেখ্য এই সময়ে মার্কিন অর্থনীতির মোট ব্যয়ের পরিমাণ ৩ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে। এক পর্যায়ে কোয়ালিশনের বেশ কিছু রাষ্ট্র ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করে। গণ অসন্তোষ এবং ইরাকী বাহিনীর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেয়ার কারণেই এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আবু গারীব কারাগারে মুসলমানদের উপর চালানো অমানবিক নির্যাতনঃ

.........

মুসলিম নির্যাতনের সংক্ষিপ্ত রিপোর্টঃ

উইকিলিকসের ফাস করে দেওয়া এক রিপোর্ট থেকে মার্কিন বাহিনীর নৃশংসতা সম্পর্ক কিছু তথ্য জানা যায়, যেমন- যুদ্ধ ছাড়াও আরও নানাভাবে ইরাকিদের জীবন দিতে হয়েছে বিদেশি সেনাদের হাতে৷ মার্কিন সেনাবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফাঁস হওয়া এই দলিলে দেখা গেছে, জেলের মধ্যে ইরাকিদের কিভাবে নির্যাতন এবং পরে হত্যা করা হয়েছে৷ পথচারীদের রাস্তার পাশে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে৷ চেক পয়েন্টগুলোতে তল্লাশি চালানোর সময় ইরাকিদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে৷ বিশেষ করে ৩৫ বছরের অন্তঃসত্ত্বা নাবিহা জসীম, যিনি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য, তাঁকে কিভাবে চেক পয়েন্টে গুলি করে হত্যা করেছিল মার্কিন বাহিনী সেই কাহিনীও জানা গেছে এই গোপন দলিল ফাঁস হওয়ার মাধ্যমে৷
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন প্রায় নয় বছরের ইরাক যুদ্ধে এক লাখ ৬২ হাজার লোক নিহত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইরাক বডি কোর্ট (আইবিসি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। পশ্চিমা একটি সংবাদ সংস্থা এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়। তখন থেকে ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত যেসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তাও এ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। মূলত ইরাকে মুসলমান শহীদানের সংখ্যা তাদের এ বানানো রিপোর্টের চেয়েও শতগুণ বেশি। কিন্তু নিজেদের বর্বরতাকে ধামাচাপা দিতেই তারা এ সংখ্যা মাত্র লাখে গিয়ে ঠেকিয়েছে।
আইবিসির হিসাবে, প্রাণহানির এ পরিসংখ্যানের মধ্যে ৭৯ শতাংশই বেসামরিক লোক। বাকি নিহতদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন সেনা, ইরাকি সেনা ও পুলিশ এবং হামলাকারী। সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইরাকে এখনো সহিংসতা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আইবিসির এই নতুন তথ্য এটাই প্রমাণ করে, ইরাক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। দেশটি থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরও সেখানকার পরিস্থিতি ভালো হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আইবিসির হিসাবে ইরাক যুদ্ধে চার হাজার ৪৭৪ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে।
২০০৭ সালের এক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, সকল ইরাকীর নৃশংস মৃত্যু, অপিনিয়ন রিসার্চ বিজনেস আগস্ট ২০০৭ পর্যন্ত:১,০৩৩,০০০ (৯৪৬,০০০-১,১২০,০০০)। কারণ; গুলিবিদ্ধ (৪৮%), গাড়ি বোমা (২০%), উপর থেকে নিক্ষেপিত বোমা (৯%), দুর্ঘটনা (৬%), অন্য বিস্ফোরণ/অর্ডন্যান্স (৬%)
***সর্বমোট মৃত্যু (সকল অতিরিক্ত মৃত্যু) জন্‌স হপকিন্স (ল্যান্সেট) - জুন ২০০৬ পর্যন্ত: ৬৫৪,৯৬৫ (৩৯২,৯৭৯-৯৪২,৬৩৬)। ৬০১,০২৭ সহিংস মৃত্যু (৩১% কোয়ালিশন দ্বারা, ২৪% অন্যান্যের দ্বারা, ৪৬% অজানা)
সকল ইরাকীদের সহিংস মৃত্যু। ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের হতাহতের জরিপ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য। জুন ২০০৬ পর্যন্ত: ১৫১,০০০ (১০৪,০০০ থেকে ২২৩,০০০)

আমেরিকার  বিপর্যয়ঃ

২০১০ সালে মার্কিন জয়েন্ট চীফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মাইক মুলেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইরাক ও আফগান যুদ্ধের জন্য অবর্ণনীয় মূল্য দিতে হবে। এতে কত লোক নিহত হবে তারও কোনো ঠিক নেই বলে মন্তব্য করেছে সে।
মুলেন বলে, যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে আজ যা দেখা যাচ্ছে তা নিতান্তই সামান্য; এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের স্বাস্থ্য সেবা এবং জাতীয় পর্যায়ে চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া, যুদ্ধের মূল্য দিতে গিয়ে বহু মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া হতে হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা ধারণা করছে, যুদ্ধের মোট ব্যয় হতে পারে দুই দশমিক চার ট্রিলিয়ন ডলার বা মাথাপিছু আট হাজার ডলার।
মাইক মুলেন আরো বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনা ফিরিয়ে আনলেও তারা নানা অদৃশ্য ক্ষত নিয়ে এবং মানসিক বিষন্নতা, উদ্বেগ ও পক্ষাঘাতে ভুগতে থাকবে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা বহু আহত সেনার প্রতি ইঙ্গিত করে সে বলে,যারা ফিরে আসছে তাদের যুদ্ধ জীবনের কখনই শেষ হবে না। এদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের কষ্ট মাত্র শুরু হয়েছে। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত হয়েছে। সে সৈন্যদের মধ্যে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার হার এবং মানসিক রোগ বেড়ে যাওয়ার বিষয়েও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। গত আগস্ট মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ে এক হাজার একশ মার্কিন সেনা আত্মহত্যা করেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, “শত্রুদের চেয়ে আমরা নিজেরাই আমাদের বড় শত্রু।
আজ বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা তার পেছনের মূল কারণ ইরাক যুদ্ধ। আমেরিকা তার মাশুল দিচ্ছে , আরো দিবে তাতে সন্দেহ নেই। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায়, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আমেরিকায় কর্মহীন হয় ৬ লাখের বেশি শ্রমিক/কর্মচারী/কর্মকর্তা।
বর্তমানে আমেরিকায় বেকারের সংখ্যা ১১ লক্ষের মতন । ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার গচ্চা গেছে $ 683,218,911,27 ডলার ছয়হাজার-আটশো-বত্রিশ কোটি ডলার !!! বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ করে তারা এ যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করে , পরিণতিতে বিশ্ব আজ ভয়াবহ মন্দার কবলে। এই মন্দার সুযোগ নিয়ে চায়না , রাশিয়া , উত্তর কোরিয়া ও অন্যান্য কমিউনিস্ট ব্লক আমেরিকার সাথে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধ আরম্ভ করেছে বলা যায়। বিশ্বে , আমেরিকা এখন বন্ধুহীন এক দানব। অন্যায়, অসম ও অবৈধ যুদ্ধের খেসারত আমেরিকাকে দিতে হল এভাবেই। সম্ভবত তার অপমৃত্যুর শেষ কারণ টি ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ।
আমেরিকার পরিচালিত ইরাক যুদ্ধের নৃশংসতা যে ঘৃণা ও শত্রুতার অশুভ জাল সৃষ্টি করেছে তা মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে অনেক দূর গড়াবে বলে ধারণা অনেক বিশেষজ্ঞদের। সন্ত্রাসের বিরোধী যুদ্ধে আমেরিকা নিরস্ত্র ইরাকের কাছে এভাবেই পরাজিত হল ! এ পরাজয়ের কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন , আমেরিকা তার নিজের সাথেই যুদ্ধ করেছে ,কারণ সন্ত্রাসী সে নিজেই।  তবে কি ইরাক যুদ্ধের আগে সাদ্দাম হোসেনের সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হতে যাচ্ছে? " ইরাক যুদ্ধ হবে আমেরিকার কফিনে গেড়ে দেওয়া সর্বশেষ পেরেক"

আমেরিকার পলায়নঃ

২০১১ সালের ২১ অক্টোবর, প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষণা করে যে, সে তার সকল আমেরিকান সৈন্য সে বছরের শেষের দিকে ইরাক থেকে সরিয়ে নিবে। ২০১১ সালেরই ১৫ ডিসেম্বর আমেরিকান ডিফেন্স এর সেক্রেটারি লিয়ন প্যানেট্টাঅফিসিয়ালি ইরাক যুদ্ধের অবসান ঘোষণা করে।
মার্কিন সৈন্যদের ইরাক থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর সামনে কঠিন দিন আসছে বলে ইরাকিদের সতর্ক করে দিলেন বারাক হোসেন ওবামা। তবে সে সময় ইরাকিরা প্রশ্ন করার সুযোগ পায় নি সেই কঠিন সময়টা কে তাদের দিয়ে গেল !
যাকে একসময় পৃথিবীর শহর বলা হত সেই বাগদাদকে কয়েকমাসের মধ্যেই ধ্বংসস্তুপের ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত করা হয় । বাগদাদ থেকে বাস'রা , বাস'রা থেকে কুফা , কুফা থেকে মাসুল , মাসুল থেকে .... এক এক করে পুরো ইরাক ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে সালফার আর মরা লাশের গন্ধ। যুদ্ধে সব মিলিয়ে মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে ৫ হাজার এর মত , পঙ্গুত্ত বরণ করেছে ১ লক্ষ সৈন্য । উপরন্তু অনেক মার্কিন সৈন্য আত্মহত্যা করে যুদ্ধচলাকালে। সম্ভবত অন্যায় যুদ্ধ উপলব্ধি করার অনুশোচনা থেকে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
সেই তুলনায় ইরাকিদের প্রাণহানীর পরিমাণ ভয়াবহ মাত্রার। বেসরকারি হিসেবে(একটি মার্কিনী সংস্থার মতে ) ৭ লাখের কাছাকাছি।
হৃদয় ভারাক্রান্ত হয় , চোখ হয় অশ্রুসিক্ত একটি মিথ্যা যুদ্ধে ৭ লক্ষ গণহত্যার ধ্বংসলীলায় । যে কারণে যুদ্ধ করা হয়েছিল তার সত্যতা প্রমাণ হয়নি আজো। "ব্যাপক বিধ্বংসী মরণাস্ত্র" না পেয়েই আ্যমেরিকানরা গতকাল ইরাককে ৭ লক্ষ মানুষের কবর বানিয়ে তাদের দেশে ফেরা আরম্ভ করেছে।
ইরাক যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়েছে তা মার্কিনিরা আগে বুঝলে ভুলেও এ পথে পা বাড়াতো না। এ যুদ্ধে মার্কিনিদের শুধু পরাজয় ঘটেনি , মধ্যপ্রাচ্যে আল-কায়েদার শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়াবহভাবে। যার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল আমেরিকা তাকে ঘায়েল করতে পারা যায়নি বরং ইউরোপ ও এশিয়ায় তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোও আজ তার শত্রু । মার্কিনিদের ইতিহাসে এত নির্মম পরাজয় এর আগে ঘটেছে বলে মনে হয় না।
লক্ষণ যা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় মার্কিনিরা এভাবে আস্তে আস্তে লেজ গুটিয়ে নেবে দখলকৃত দেশগুলো থেকে। তারপর সাধারণত যা ঘটার তাই ঘটবে। ভয়বহতার শিকার হবে তার ফেলে আসা বন্ধু সরকারগুলো। এ যুদ্ধে মার্কিনীদের পরাজয় সুষ্পষ্ট। তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অবর্ণনীয়। প্রায় লাখের মত পঙ্গু মার্কিন সৈন্যরা আজ আমেরিকায় অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা সামলাতে ব্যস্ত মার্কিন সরকার তাদের মাসিক ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। যারা অক্ষত অবস্থায় ইরাক থেকে নিজ দেশে ফিরে এসেছে তাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে মানসিক ভারসাম্যহীনতা হারিয়েছে । যেসব সৈন্যরা মৃত্যুবরণ করেছে অথবা পঙ্গু হয়েছে তাদের পরিবার পরিজনদের ঘৃণা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্রনিতীর উপর। শম্বুক গতিতে আমেরিকান সৈন্যদের মনোবল ও আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতে কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার । সম্ভবত এই কারণে আমরা দেখি, আমেরিকা সম্প্রতি মানুষবিহীন রিমোট কন্ট্রোল চালিত ড্রোন বিমান ও যুদ্ধযান ব্যবহার করছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে।

সূত্রঃ
১) http://en.wikipedia.org/wiki/Iraq_War
২) বিভিন্ন বাংলা ব্লগ

[বিঃদ্রঃ তথ্য প্রদানে কোন ভুল থাকলে দয়া করে মেইল করে জানাবেন]

[ট্যাগঃ পীর-মুরীদি (মুরিদি) ব্যবসাধারী ভন্ড-পীর সহ ধর্মব্যবসায়ীদের জম রাজারবাগ দরবার শরীফ, রাজারবাগী পীর সাহেব কিবলা আলাইহিস সালাম]